দারুণ কাটানো একটি বছরে নিজেদের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ। নেভিল মাডজিভার ঝড়ো এক ইনিংসে তিন উইকেটের নাটকীয় জয় পেয়েছে জিম্বাবুয়ে।
রোববার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ১৩৫ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ১ বল বাকি থাকতে ৭ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় জিম্বাবুয়ে।
এই জয়ে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শেষ হয়েছে ১-১ সমতায়। এর আগে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতেছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৫ রানে তিন উইকেট হারিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় ওভারে পর পর দুই বলে সিকান্দার রাজা ও শন উইলিয়ামসকে ফিরিয়ে দেন আল আমিন হোসেন।
মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দি হন উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রাজা। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান উইলিয়ামস হন বোল্ড।
বোলিং এসেই আঘাত হানেন মুস্তাফিজুর রহমান। তার দ্বিতীয় বলটি উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে সাব্বির রহমানের ক্যাচে পরিণত হন রেগিস চাকাভা।
ক্রেইগ আরভিনের রান আউট আর এল্টন চিগুম্বুরার দ্রুত বিদায় জিম্বাবুয়ের বিপদ আরও বাড়ায়। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে শূন্য রানে আউট হন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক। জুবায়ের হোসেনের বদলে দলে ফেরা আরাফাত সানির বলে লং অফে মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ দেন তিনি।
৩৯ রানে ৫ উইকেট হারানো জিম্বাবুয়ে প্রতিরোধ গড়ে লুক জংউই ও ম্যালকম ওয়ালারের ব্যাটে। তাদের ৫৫ রানের জুটি ভাঙেন শুরুতে জিম্বাবুয়েকে কাঁপিয়ে দেওয়া আল আমিন। তার বলে ইমরুল কায়েসকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান ৩৮ বলে ৩৪ রান করা জংউই।
জিম্বাবুয়ের আশা বাঁচিয়ে রাখেন ওয়ালার ও নেভিল মাডজিভা। ১৯তম ওভারে ১০ রানে মুস্তাফিজের বলে ‘নো’ বলের কল্যাণে মাডজিভা বেঁচে যান। তবে ফ্রি হিটসহ সেই ওভারের শেষ তিন বলে কোনো রান নিতে পারেননি এই ব্যাটসম্যান।
জয়ের জন্য শেষ ওভারে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ১৮ রান। সেই ওভারটি করতে আসেন নাসির হোসেন। এর আগে তার বলে দুটি ছক্কা হাঁকানো ওয়ালার প্রথম বলেই লং অনের ওপর দিয়ে উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করতে চেয়েছিলেন, তবে সাব্বিরের হাতে ধরা পড়েন তিনি।
দ্বিতীয় বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ব্যবধান কমান মাডজিভা। পরের বলে লং অফে বল পাঠিয়ে নেন দুই রান। চতুর্থ বলে চার হাঁকিয়ে দলকে জয়ের আরও কাছে নিয়ে যান তিনি। পঞ্চম বলে বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে দারুণ এক জয় এনে দেন মাডজিভা।
২০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার আল আমিন।
এর আগে চার বছর পর টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা ইমরুলের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে ভালো সূচনা এনে দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল। তাদের ৩.৪ ওভার স্থায়ী ৩৪ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে তামিমের বিদায়ে।
মাডজিভার বল উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে চিগুম্বুরার ক্যাচে পরিণত হন তামিম। ১৫ বলে খেলা তার ২১ রানের ইনিংসটি গড়া দুটি ছক্কা ও একটি চারে। তামিম ফিরে যাওয়ার পর আর জিম্বাবুয়ের বোলারদের ওপর চড়াও হতে পারেনি স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা।
পরের ওভারেই ফিরে যান ইমরুল। বাঁহাতি স্পিনার টেন্ডাই চিশোরোর বলে উইলিয়ামসের তালুবন্দি হন ইমরুল।
আগের ম্যাচে ৩ উইকেট নেওয়া গ্রায়েম ক্রেমার বোলিংয়ে এসেই সাফল্য পান। এই লেগ স্পিনারের বলে সুইপ করে সীমানায় উইলিয়ামসের হাতে ধরা পড়েন মুশফিক।
পঞ্চম উইকেটে এনামুল হকের সঙ্গে ৩৯ রানের জুটি গড়ে ফিরে যান সাব্বির। ক্রেমারের বলে সুইপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন তিনি।
দলের বিপদ বাড়িয়ে একই ওভারে ফিরে যান নাসির হোসেন ও মাহমুদউল্লাহ। টিনাশে পানিয়াঙ্গারার স্লোয়ার বলে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন নাসির। দুটি চার হাঁকানো মাহমুদউল্লাহ ফিরে যান জংউইর অসাধারণ এক ক্যাচে পরিণত হয়ে।
আগের ম্যাচে ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জয় এনে দেওয়া মাশরাফি এবার ফিরেন শূন্য রানে। মাডজিভার বলে বোল্ড হয়ে যান বাংলাদেশের অধিনায়ক। ভালো করতে পারেননি আরাফাতও।
এনামুল আবারও ফিরেছেন রান আউট হয়ে। চতুর্থ ওভারে ক্রিজে আসা এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান শেষ ওভারে বিদায় নেওয়ার আগে ৫১ বলে করেন ৪৭ রান।
৩০ রানে ৩ উইকটে নিয়ে জিম্বাবুয়ের সেরা বোলার পানিয়াঙ্গারা। এছাড়া ক্রেমার ও মাডজিভা দুটি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৩৫/৯ (তামিম ২১, ইমরুল ১০, এনামুল ৪৭, মুশফিক ৯, সাব্বির ১৭, নাসির ৩, মাহমুদউল্লাহ ৮, মাশরাফি ০, আরাফাত ৫, মুস্তাফিজ ১*, আল আমিন ১*; পানিয়াঙ্গারা ৪-০-৩০-৩, মাডজিভা ৪-০-২৫-২, চিশোরো ৪-০-২৭-১, উইলিয়ামস ৪-০-২৬-০, ক্রেমার ৪-০-২১-২)
জিম্বাবুয়ে: ১৯.৫ ওভারে ১৩৬/৭ (রাজা ৫, চাকাভা ৪, উইলিয়ামস ০, আরভিন ১৫, জংউই, চিগুম্বুরা ০, ওয়ালার ৩৪, মাডজিভা ২৮*, ক্রেমার ০*; মাশরাফি ৪-০-২৭-০, আল আমিন ৪-০-২০-৩, মুস্তাফিজ ৪-০-১২-১, আরাফাত ৪-০-২৬-১, নাসির ৩.৫-০-৪৫-১)
ফল: জিম্বাবুয়ে ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: নেভিল মাডজিভা
সিরিজ সেরা: ম্যালকম ওয়ালার
0 comments:
Post a Comment