একজন ব্যাট হাতে উপহার দিয়েছেন দ্যুতিময় সব ইনিংস। আরেকজন বল হাতে জন্ম দিয়েছেন স্মরণীয় সব মুহূর্ত। ওয়ানডেতে সাফল্যে মোড়া একটা বছর গেল মুশফিকুর রহিম ও মুস্তাফিজুর রহমানের, সুবাদে বাংলাদেশ দলেরও। এ বছর ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন মুশফিক, সবচেয়ে বেশি উইকেট পেয়েছেন মুস্তাফিজ—
নিজেকে প্রচারের আড়ালে রাখতে চান। দশবার সাক্ষাৎকার চাইলে হয়তো সম্মতি জানাবেন একবার। কালও ব্যতিক্রম হলো না। ২০১৫ সালে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দলের হয়ে সর্বোচ্চ রান করেছেন। একটা সাক্ষাৎকার কি দেবেন না মুশফিকুর রহিম?
খুদে বার্তায় প্রস্তাবটা দেওয়ার মিনিট খানেকের মধ্যেই এল সংক্ষিপ্ত জবাব, ‘না ভাই, আমি সাক্ষাৎকার দেব না। তবে আমার প্রতিক্রিয়া হলো, আলহামদুলিল্লাহ...। চেষ্টা করব এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে।’ এ রকম বার্তা বিনিময়েই বিষয়টা নিয়ে আরও কিছু প্রশ্নের উত্তর দিলেন মুশফিক। ঘুরেফিরে যার সারমর্ম—বছর শেষ হয়ে যাচ্ছে বলেই থামিয়ে দিতে চান না পারফরম্যান্সের রেলগাড়ি। ব্যাটে রানের প্রবাহ চান এভাবেই।
২০১৫ সালে ১৮টি ওয়ানডে খেলে মুশফিকের রান ৭৬৭। ওয়ানডেতে ক্যারিয়ার গড় ৩১.৬১ হলেও শুধু এই বছরই সেটা ৫১.১৩। পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২টি সেঞ্চুরি ছাড়াও ফিফটি আছে ৪টি। বাড়তি একটা তথ্যও জেনে রাখতে পারেন এসবের সঙ্গে। এ বছর ১৬ ইনিংস ব্যাট করে মুশফিক দুই অঙ্কের নিচে রান করেননি কোনোটাতেই।
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে এক বছরে তাঁর চেয়ে বেশি রান করার দৃষ্টান্ত আছে× ৬ বার। ২০০৬ সালে শাহরিয়ার নাফীসের ১০৩৩-ই এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। ২০১০ সালে ইমরুল কায়েস করেছিলেন ৮৬৭, তামিম ইকবাল ২০০৮-এ ৮০৭ ও ২০১০-এ ৭৭৬, ২০১০ সালেই সাকিব আল হাসান করেছেন ৭৮৭ ও ২০০৬ সালে আফতাব আহমেদ ৭৮৪ রান। তবে মুশফিকের চেয়ে বেশি করলেও তাঁরা তা করেছিলেন কমপক্ষে ২৩ ও সর্বোচ্চ ২৮ ম্যাচ খেলে। ৫ থেকে ১০ ম্যাচ কম খেলা মুশফিকের বছর শেষে রানের গড়টাও তাই অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। দেশের হয়ে এক বছরে তাঁর চেয়ে বেশি রান করা কারোরই ৫০ বা তার ওপরে গড় ছিল না।
মুশফিক অবশ্য সামনে আরও বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখেন। সব সময়ই ছাড়িয়ে যেতে চান নিজেকে। ২০১৫ সালে সবচেয়ে বেশি রান করার গৌরব নিয়ে তাই খুব বেশি হইচই চান না বাংলাদেশ দলের টেস্ট অধিনায়ক, ‘আমি নীরবেই এ রকম ভালো পারফরম্যান্স করে যেতে চাই। লক্ষ্য থাকবে আগামী বছরও দেশের হয়ে কীর্তিটা ধরে রাখা।’
ওয়ানডেতে চার সেঞ্চুরির দুটিই করেছেন এ বছর। তবে বছরের প্রায় শেষ প্রান্তে এসে সেরা ইনিংস হিসেবে সেগুলোর কোনোটার কথাই বললেন না, ‘সেরা ইনিংস ইংল্যান্ডের বিপক্ষেরটা।’ মুশফিকের সেরা ইনিংস মনে করিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপের কথাই। অ্যাডিলেডে ৯৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়েও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৫ রানের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল মুশফিকের ৭৭ বলে ৮৯ রানের।
কারণ শুধু এ বছরের পারফরম্যান্সই নয়, মাশরাফি বিন মুর্তজার দৃষ্টিতে কয়েক বছর ধরে মুশফিকই বাংলাদেশ দলের সেরা ব্যাটসম্যান। তাঁর আলোয় আলোকিত ২০১৫ সালটা নিয়ে গৌরব ওয়ানডে অধিনায়কেরও কম নয়। তাঁর মুখেও ঘুরেফিরে আসছে বিশ্বকাপ, ‘বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলাটা এ বছর আমাদের সবচেয়ে বড় সাফল্য। তবে আমি সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে এসেও এখানে ওদের বিপক্ষে সিরিজ জিতে।’
আর ২০১৫ সালে বাংলাদেশ দলের সেরা খেলোয়াড়ের নাম? অধিনায়ক বলেই হয়তো কোনো একজনকে বেছে নিলেন না। তবে বছরান্তে সেরা খেলোয়াড়দের যে তালিকা তাঁর হাতে আছে সেখানে মুশফিকের নামটাই থাকার কথা সবার ওপরে।
২০১৫ সালে মুশফিক
ম্যাচ ১৮
রান ৭৬৭
সেরা ১০৭
গড় ৫১.১৩
সেঞ্চুরি ২
ডিসমিসাল ২৪
মুশফিকের সেরা বছর


Like This Post? Please share!

0 comments:
Post a Comment